• বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন

অবহেলিত জনপদে স্বপ্নের হাতছানি

Reporter Name / ২৮৯ Time View
Update : সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার পদ্মা নদীর দুর্গম চরে বিদ্যুতায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। বিচ্ছিন্ন এ চরাঞ্চলে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুত সংযোগ প্রদান করা হবে। পদ্মার চর অধ্যুষিত নারায়ণপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আসছে। ইতোমধ্যে আলোর ইশারা পেয়ে খুশি চরের মানুষ।

বিদ্যুত সরবরাহ সম্পন্ন হলে নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলবাসীর জীবনধারা পরিবর্তনের পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন চরবাসীসহ সংশ্লিষ্টরা। সর্বনাশা পদ্মা নদীর ভাঙ্গাগড়ার খেলায় মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই ইউনিয়নটি এতদিন বিদ্যুত সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুত সমিতির প্রকৌশলীরা বলেছেন, আগামী এপ্রিলেই পদ্মার দুর্গম চরে জ্বলবে বিদ্যুতের আলো। সে লক্ষ্যেই দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে চলছে। বিদ্যুত সরবরাহের ফলে চরাঞ্চলের কৃষি ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। বিশেষ করে এখানে আগে যে পরিমাণ ফসল উৎপাদন হতো, বিদ্যুতের কারণে এখন বেশি পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন হবে। ডিজেল নির্ভর এই অঞ্চলের কৃষকরা এখন বিদ্যুতের সাহায্যে জমিতে সেচ দিয়ে একাধিক ফসল ফলাতে পারবেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুত সমিতির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বহু বছর আগে পদ্মার চরে জনবসতি গড়ে ওঠে। তবে চরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিলেও বিদ্যুত না থাকায় সেখানকার মানুষ অনগ্রসর রয়েছে। একই সঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ আয়ের বহুমুখী ধারার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারছে না। ওই চরে চারদিক থেকে পানিবেষ্টিত হওয়ায় এখানে সরাসরি গ্রিড পৌঁছানো কঠিন। সঙ্গত কারণে ওই এলাকায় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদ্মার চরে বসবাস করা মানুষগুলোর কাছে বিদ্যুত ছিল স্বপ্নের মতো। তারা কখনও ভাবেনি এ দুর্গম জনপদে বিদ্যুত আসবে। তাদের স্বপ্ন এবার হাতের মুঠোয় ধরা দিচ্ছে বিদ্যুতের আলো। দুর্গম চরাঞ্চলে বিদ্যুতায়নের দৃশ্যমান কর্মকাণ্ডে আনন্দ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা মনে করছেন এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অন্ধকারের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে আলোর পথে নতুন যাত্রা শুরু করবেন তারা। একইসঙ্গে জীবনমানে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে তাদের।

অবহেলিত এ জনপদে যোগ হবে নতুন দিগন্তের সূচনা। এখনও পদ্মার চরের মানুষের সৌরবিদ্যুত, হারিকেন ও প্রদীপের আলো একমাত্র ভরসা। ডিজেলচালিত মেশিনে উৎপাদিত হচ্ছে কৃষিপণ্য। এবার পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে সেই চরে বিদ্যুতায়নের কাজ চলছে। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে এসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পদ্মা নদী এ চরকে মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করেছে। এর এক পাশে ভারতীয় সীমানা। নৌযান ছাড়া চরে যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। আমরা চরবাসী কখনও বিদ্যুতের আলো পাব, তা কল্পনাও করিনি। এখন চরে বিদ্যুতের খুঁটি দৃশ্যমান। তার টানাসহ সব কাজ শেষ পর্যায়ে। এজন্য নতুন স্বপ্ন বুনছেন দুর্গম চরের বাসিন্দারা।

স্থানীয় একজন কৃষক বলেন, এখানে বিদ্যুত আসবে, তা আমাদের জন্য ছিল স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ফলে আমরা এলাকার কৃষকরা অনেক উপকৃত হবো। বিশেষ করে ডিজেলচালিত ইঞ্জিনের সাহায্যে জমির সেচ কাজ করতে গিয়ে আমাদের অনেক টাকা খরচ হতো। এখন বিদ্যুত সুবিধা পাওয়ায় আমাদের জমি চাষাবাদ করতে টাকা খরচ কম হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কৌশিক আহম্মেদ বলেন, দুর্গম চরে বিদ্যুত সংযোগ প্রদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের যুগান্তকারী একটি উদ্যোগ। এতে পিছিয়ে পড়া এ জনপদ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে। আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুত সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (ওএ্যান্ডএম) মেহেদী হাসান বলেন, সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে স্থলভাগের মতোই বিদ্যুত সুবিধা পাবেন নদীবেষ্টিত এই অঞ্চলের লোকজন। বিদ্যুত সরবরাহ নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলবাসীর জীবনধারা পরিবর্তনের পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। গড়ে ওঠবে শিল্প-কলকারখানাসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এতে কৃষকরা অনেক লাভবান হবে। ধান, গম, রবিশস্যসহ সব ধরনের ফসলের চাষাবাদ, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি ফার্মসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই এলাকার লোকজন সুবিধা পাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুত সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম জানান, পদ্মা নদীর তলদেশে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে চরাঞ্চলকে জাতীয় বিদ্যুত গ্রিডের আওতায় আনা হচ্ছে। সদর উপজেলার ইসলামপুরের চাঁটাইডুবী বিদ্যুত উপকেন্দ্র থেকে সাড়ে ১৪ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবল ও ১০৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে পদ্মার চরে বিদ্যুত সরবরাহ করা হবে। এর মধ্যে ১০৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন সম্পন্ন হয়েছে। এতে নারায়ণপুর ইউনিয়নের সাড়ে ৭ হাজার গ্রাহক বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আসবে। (সূত্র : জনকণ্ঠ)

আরবিসি/১৫ ফেব্রƒযারি/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category