• মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৪ অপরাহ্ন

আল্টিমেটামের মুখে অবশেষে দুঃখ প্রকাশ করলেন মিনু

Reporter Name / ৯৫ Time View
Update : রবিবার, ৭ মার্চ, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবজ্ঞা ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হত্যার’ ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দেয়ায় পর আল্টিমেটামের মুখে অবশেষে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। রবিবার এক বিবৃতিতে তিনি এই দুঃখ প্রকাশ করেছেন। রাজশাহী নগর বিএনপির দফতর সম্পাদক নাজমুল হক ডিকেন ই-মেইলে বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন।

এর আগে মিনুকে ক্ষমা চাইতে নগর আওয়ামী লীগের বেঁধে দেয়া ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ হয় শনিবার সন্ধ্যায়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্ষমা না চাইলেও পরদিন তিনি দুঃখ প্রকাশ করলেন। যোগাযোগ করা হলে মিজানুর রহমান মিনু এই বিবৃতিটি পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

বিবৃতিতে মিনু উল্লেখ করেছেন, ‘আমার বক্তব্যের জন্য যারা ব্যথিত হয়েছেন, মর্মাহত হয়েছেন, আমি তাদের নিকট দুঃখ প্রকাশ করছি।’ মিনু আরও বলেন, ‘আমি এই মহানগরীতে জন্মগ্রহণ করে দীর্ঘদিন রাজশাহীবাসীকে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নিষ্ঠার সাথে দ্বায়িত্ব পালন করে আসছি। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ সকল আন্দোলনে পাশে পেয়েছি। সুতরাং কোন ব্যক্তি বিশেষ বা গোষ্ঠী বিশেষকে উদ্দেশ্য করে আক্রোশমূলক বক্তব্য প্রদান করা আমার স্বভাববহির্ভূত। তাই সকলকে আমার বক্ত্যব্যে ষড়যন্ত্র না খোঁজার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

এর আগে গত মঙ্গলবার বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে মিজানুর রহমান মিনু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আজ রাত, কাল আর সকাল নাও হতে পারে। ৭৫ মনে নাই?’ সেই সমাবেশে মিনু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও কটাক্ষ করে বক্তব্য দেন। এর প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে নগর আওয়ামী লীগ। পরদিনই বিক্ষোভ-সমাবেশ করে দলটি। সেই সমাবেশ থেকে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মিনুকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।

ওইদিন লিটন ঘোষণা দেন, এই সময়ের মধ্যে মিনু ক্ষমা না চাইলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। আর বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা এক প্রতিবাদলিপিতে মিনুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবেই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। নগর ওয়ার্কার্স পার্টির বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে তো মিনুকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।

অবশেষে আল্টিমেটামের মুখে মিনু দুঃখ প্রকাশ করলেন। এর আগে ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর রাজশাহী মহানগর বিএনপির এক বিক্ষোভ সমাবেশে মিনু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে তুলনা করে কটুক্তিমূলক বক্তব্য রাখেন। এ নিয়ে তখনও রাজশাহীতে বিক্ষোভ করে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করে বক্তব্য দেয়ায় তাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। এরপর ফেসবুক লাইভে এসে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন সাবেক সিটি মেয়র মিনু।

এবার বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ এবং আরেকটি ১৫ আগস্টের ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দেয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। গত শুক্র ও শনিবার বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলেন। মিনু এত সাহস কোথায় পেলেন সেই প্রশ্নও তোলেন ওবায়দুল কাদের। অবশেষে মিজানুর রহমান মিনু গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেন।
এদিকে মিনু বিবৃতি পাঠানোর আগে আল্টিমেটামের সময় শেষ হওয়ায় নগর আওয়ামী লীগ মিনুর বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নেয়। রবিবার ৭ মার্চের আলোচনা অনুষ্ঠানেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন উপস্থিত ছিলেন। সেই আলোচনা সভায় মিনুর বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়।

সভা শেষে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘আমরা বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনুর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের আইনজীবীদের বলা হয়েছে। কোন কোন ধারায় মামলা করা যায় সেটা তারা দেখবেন। সোমবার আদালতে মামলা করা হবে। এছাড়া আগামী ৯ মার্চ রাজশাহীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে। সেখানে আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল ও রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনও উপস্থিত থাকবেন।’

এসব সিদ্ধান্তের পর মিনুর দুঃখ প্রকাশ নিয়ে আওয়ামী লীগ কী ভাবছে জানতে চাইলে ডাবলু সরকার বলেন, ‘সেটা আবার আলোচনার বিষয়। আমরা আবার একটু আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাব।’ আর মিনুর বিবৃতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘এটা মিজানুর রহমান মিনুর একান্তই ব্যক্তিগত বক্তব্য। এ ব্যাপারে বিএনপি কী বলছে আমরা সেটা শুনতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘মিজানুর রহমান মিনু অতীতে জঙ্গিবাদে মদদ দিয়েছেন। সেটা প্রমাণিত। তাই অতীতের মতো এখনও তিনি জঙ্গিবাদ কিংবা ষড়যন্ত্রের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কিনা সে ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।’

আরবিসি/০৭ মার্চ/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category