• শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:০৫ পূর্বাহ্ন
  • [gtranslate]
শীর্ষ সংবাদ
কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে উত্তাল রাবি ক্যাম্পাস, রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ রাজশাহী জেলা আ’লীগের সভাপতিকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় বাগমারা উপজেলার আ’লীগের বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে দুর্বৃত্তদের হামলা ইউরোপ বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের নতুন আহবায়ক আব্দুল্লাহ ইকবাল, শাহাদাৎ হোসেন মুন্নার অভিনন্দন প্যারাগুয়ের জালে ৪ গোলে দুর্দান্ত জয় ছিনিয়ে নিল ব্রাজিল, জোড়া গোল করেছেন ভিনিসিউস আজ রাজধানীতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমাবেশ খুনোখুনি বেড়েছে আওয়ামী লীগে রাজশাহীতে আবাসিক হোটেলে অসামাজিক কাজের অভিযোগে মালিকসহ আটক ১৭ রাজশাহী-৬ আসনের এমপি’র কুশপুত্তলিকা জ্বালিয়ে শাহরিয়ার আলমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করল আ’লীগ রাজশাহীর পবা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পপির রকেটের গতিতে বয়স বৃদ্ধির তদন্ত করল কমিটি রাজশাহীর বাঘায় নিহত নেতা বাবুলের জানাজা থেকে বের করে দেওয়া হলো জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অনীল কুমার সরকারকে

হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনাকারীও পেল ‘উপহার’

Reporter Name / ৮৪ Time View
Update : সোমবার, ১৫ মার্চ, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : দেশ কাঁপানো হলি আর্টিজানে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত আইএসআইয়ের আদলে গড়ে ওঠা নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা সারোয়ার জাহানের পরিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে পেয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি। উপজেলা প্রশাসন বলছে, ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সুপারিশে পরিবারটিকে দেয়া হয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার।’

হলি আর্টিজানে হামলার আগের দিন বসুন্ধরার একটি বাসায় হামলার চূড়ান্ত পরিকল্পনার সময় মূল হামলাকারীদের অন্যতম জঙ্গী ছিল সারোয়ার জাহান ওরফে মানিক। হামলার কয়েকদিন আগে থেকে নিয়মিত জঙ্গীদের বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান ও উদ্দীপনামূলক বক্তব্য দিত সারোয়ার জাহান। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলায় অন্যতম মাস্টার মাইন্ড ও অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করেন সারোয়ারের নাম। সেই সারোয়ার জাহান ওরফে মানিকের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের মুশরীভূজা গ্রামে। এবার তার পরিবার পেয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপহার।

ভূমিহীন কিংবা ২ শতকের নিচে জমি থাকা পরিবার জমিসহ ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাড়ি পাওয়ার কথা থাকলেও জঙ্গী সারোয়ারের বড় ভাই মনিরুলের পৈত্রিক সম্পত্তি রয়েছে ১৪ শতকের বেশি। অথচ একজন জঙ্গী পরিবারের সদস্য হয়েও বাগিয়ে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার।

জঙ্গী সারোয়ারের পরিবার ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের দাবি, ভূমিহীন দরিদ্র হওয়ার সুবাদেই বাড়ি পেয়েছে তারা। অথচ জমির কাগজপত্রে (খতিয়ান) দেখা যায়, জঙ্গী সারোয়ারের বাবা আব্দুল মান্নানের নামে দুটি খতিয়ানে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ জমি রয়েছে। এতে পৈত্রিক সূত্রে দেশে প্রচলিত আইনানুসারে ১৪ শতকেরও বেশি জমি রয়েছে সারোয়ারের ভাই মুদি দোকানি মনিরুল ইসলামের নামে। শুধু জঙ্গী পরিবার নয়, ভোলাহাট উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি দেয়া নিয়ে রয়েছে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ।

উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বলেন, এই গ্রামে অনেক হতদরিদ্র মানুষ রয়েছে। যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উপহার পাওয়ার যোগ্য। অথচ তা না করে জমি রয়েছে এমন জঙ্গী পরিবারের সদস্যকে বাড়ি দেয়া হয়েছে। অবাক করার বিষয় চূড়ান্তভাবে বাড়ি প্রদানের আগেই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ হলেও অজ্ঞাত কারণে পরিবারটিকে বাড়ি দেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বাইরে গিয়ে বাড়িটি দেয়া হয়েছে জানিয়ে স্থানীয় যুবলীগ নেতা আরও বলেন, দলদলী ইউনিয়নে এখনও অনেক ভূমিহীন, অসহায়, দরিদ্র পরিবারের বসবাস। এমন কয়েকটি বাড়ি দেয়া হয়েছে, দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কেউ বসবাস করছে না। গরু ছাগলের বসবাস ও মাদকাসক্তদের আস্তানা হিসেবে রয়েছে এসব বাড়ি। সরজমিনে গিয়েও এর সত্যতা মিলেছে।

গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, ভোলাহাটে সব বাড়ি যোগ্য পরিবারগুলো পায়নি। আরেকটা বাড়ি আছে, সেখানে বসবাস করে। অথচ এমন পরিবারগুলোও বাড়ি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া বাড়িগুলোতে বসবাস করছে গরু-ছাগল। এখন জঙ্গী সারোয়ারের পরিবারও বসবাস করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, বাস্তবে গরিব, অসহায়, দুস্থ, ভূমিহীন পরিবারগুলো আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি পেলে প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ সার্থক হয়। কিন্তু ভোলাহাটে এটি হয়নি। অসহায়, ভূমিহীন পরিবারগুলো বাড়ি পাওয়ার কথা থাকলেও তারা না পেয়ে বাড়ি ও জমি রয়েছে এমন পরিবার বাড়ি পেয়েছে। যারা আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাওয়ার যোগ্য তাদেরই দেয়ার দাবি জানান তিনি।

দলদলী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাবিবুল্লাহ মেসবাহ জানান, কে বা কারা হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনাকারী সারোয়ার জাহানের ভাই মনিরুলকে বাড়ি প্রদানের বিষয়ে আগেই অভিযোগ করা হয়েছিল। পরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ইউপি চেয়ারম্যান তদন্ত করার পর মনিরুলকে বাড়িটি দেয়া হয়েছে।

জঙ্গী সারোয়ার জাহান ওরফে মানিকের সঙ্গে পরিবারের কোন সম্পর্ক ছিল না জানিয়ে তার (জঙ্গী সারোয়ার) ভাবি সালমা খাতুন বলেন, আমার শ্বশুরের জমিজমা ছিল, কিন্তু তিনি তা বিক্রি করে শেষ করছেন। কোন রকমে মুদি দোকানের মাধ্যমে সংসার চালান তারা। তাই বাড়িটি আমাদের দেয়া হয়েছে।

উপজেলার দলদলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরজেদ আলী ভুটু বলেন, কোন অনিয়ম নয়, সঠিকভাবে এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে তাদের দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার। জঙ্গী সারোয়ারের পরিবার জমি থাকা সত্ত্বেও বাড়ির পাওয়ার বিষয়ে ভোলাহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেন কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি এ বিষয়ে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেন।

ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মশিউর রহমান বলেন, মনিরুলের জমি আছে, এটা আমাদের জানা নেয়। জঙ্গী সারোয়ার জাহানের পরিবারের লোক ও জমি থাকা নিয়ে একটি অভিযোগ হলেও শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সুপারিশে পরিবারটিকে বাড়ি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে কোন অনিয়ম হয়নি বলেও জানান তিনি।

ভোলাহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াসিন আলী শাহ বলেন, প্রশাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমন্বয় বা পরামর্শ না করেই জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। তাই মনিরুলের বাড়ি পাওয়াসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠছে এমন বিষয়গুলো আবারও খতিয়ে দেখার দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুজনই আ’লীগের নেতা। জঙ্গী কার্যক্রম নিয়ে গবেষণা করেন এমন এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জঙ্গী পরিবারকে এই বাড়িটি দেয়ার মাধ্যমে অন্য তরুণদের উৎসাহ দেয়া হয়েছে। কারণ এই ঘটনার মধ্য দিয়ে নবাগত জঙ্গীরা নিজেদের পরিবারকে আরও সুরক্ষিত মনে করবে। এতে জঙ্গী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে আরও গতি আসবে এবং আত্মঘাতী হামলার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

যোগাযোগ করা হলে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ  বলেন, তার কাছেও অভিযোগ রয়েছে। তবে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে যোগদানের আগেই বাড়িটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখন ওই বাড়িতে বসবাসও শুরু হয়েছে। তারপরেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। শীঘ্রই সরজমিনে পরিদর্শন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। (সূত্র : দৈনিক জনকণ্ঠ)

আরবিসি/১৫ মার্চ/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category