• মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৩ অপরাহ্ন

রুনাই এখন শ্রীঘরে

Reporter Name / ৮৭ Time View
Update : বুধবার, ১৭ মার্চ, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাই। কাগজে-কলমে এটাই তার পরিচয়। তবে মূলত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) ঘনিষ্ঠ বান্ধবী হিসেবে খ্যাতি তার।

চট্টগ্রামের খুলশীর মেয়ে নাহিদা রুনাই। বাবা মফিজুর রহমান সরকারি দফতরের একজন ক্লার্ক ছিলেন। মা তাহমিনা খানম একজন গৃহিনী। সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া সেই রুনাই এখন শত কোটি টাকার মালিক। তার হিসাবেই ৭২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা দুদকের অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।

 

কথিত আছে পি কে হালদারের ৭০ থেকে ৮০ জন বান্ধবী ছিলেন। তবে সবার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত দুই বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাই। শুধু এই দুই বান্ধবীকে নিয়ে পি কে হালদার ২০ থেকে ২৫ বার সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নাহিদা রুনাইয়ের অসীম ক্ষমতার উৎস ছিল পি কে হালদার। শুধু তাই নয় অবন্তিকা ও রুনাইয়ের মধ্যে পি কে হালদারকে নিয়ে ছিল চরম প্রতিযোগিতা। রুনাইকে বড় আপা এবং অবন্তিকাকে ছোট আপা ডাকা হতো। কারণ রুনাই চালাতেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এবং অবন্তিকা পিপলস লিজিং।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে গ্রেফতার পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীর গত ১৫ ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতেও এমন তথ্য মিলেছে।

উজ্জ্বল রিমান্ডে বলেছেন, একবার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে গিয়ে পি কে হালদারের সাথে নাহিদা রুনাই ঝগড়া করেন এবং রাতে পি কে হালদারের বাসায় গিয়ে তার রুম ভাঙচুর করেন। তাকে না জানিয়ে গোপনে অবন্তিকার সাথে মেলামেশা একদম সহ্য করতেন না নাহিদা রুনাই। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে রুনাই ও অবন্তিকার সাথে পি কে হালদার আলাদা আলাদা সময় কাটাতেন। আমরা সবাই রুনাইকে বড় আপা এবং অবন্তিকাকে ছোট আপা ডাকতাম। কারণ রুনাই চালাতেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এবং অবন্তিকা পিপলস লিজিং। রুনাইয়ের অসীম ক্ষমতার উৎস ছিল পি কে হালদার। তাই অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন রুনাই।

উজ্জ্বল কুমার নন্দীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার একমাস পর গতকাল (মঙ্গলবার) দুদকের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন নাহিদা রুনাই। রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার সঙ্গে গ্রেফতর হন অপর দুই সহযোগী ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ আবেদ হাসান ও সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরী।

তাদের তিনজনকে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকার ভুয়া ঋণের কাগজপত্র প্রস্তুত করে আত্মসাৎ করার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

গত ২৫ জানুয়ারি পি কে হালদার কেলেঙ্কারিতে ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা করে দুদক। এর মধ্যে একটি মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।

এদিকে নাহিদা রুনাইয়ের সব ধরনের ব্যাংক হিসাব তলব করে ৮০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ক্যাসিনোবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের পরপরই তার নাম উঠে আসে। গত ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে রেড এলার্ট জারি করে ইন্টারপোল।

এছাড়া ৯ ফেব্রুয়ারি সাড়ে ২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের সম্পৃক্ততায় পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সর্বশেষ গত ৯ মার্চ কাগুজে প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আলোচিত পি কে হালদারসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে ১০টি মামলার অনুমোদন দেয় সংস্থাটি।

এ কেলেঙ্কারিতে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ১০জন। যাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী ছাড়াও পিকে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারী, রাশেদুল হক সর্বশেষ অবান্তিকা বড়াল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আরবিসি/১৭ মার্চ/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category